স্টাফ রিপোর্টার :: ৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় রাঙামাটি জেলার জেলা ও দায়রা জজ আদালত ও এর অধীন আদালতে এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আইন কর্মকর্তা (পাবলিক প্রসিকিউটর-পিপি,অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর-জিপিপি ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর-এপিপি) নিয়োগ বাতিল চেয়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান এর মাধ্যমে আন্তবর্তীকালিন সরকারের আইন ও বিচার বিভাগীয় উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী নাগরিক সমাজ ।স্মারকলিপিতে বৈষম্যবিরোধী নাগরিক সমাজ উল্লেখ করেন, গত ৫ আগষ্ট-২০২৪ স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর নতুন একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে আমরা অগ্রসর হচ্ছি, এ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার পথে আমরা যে এসেছি তা কিন্তু খুব সহজে হয়ে যায়নি, জাতি সংঘের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলেছেন বৈষম্য ও কোটাবিরোধী ছাত্র-শ্রমিক-জনতার আন্দোলনে ১৫৮০ জনের অধিক মানুষের প্রাণ গেছে। সংখ্যাটা যদি আমরা হিসাব করি মহান মুক্তিযুদ্ধ বাদে বাংলাদেশের ইতিহাসে কোন পরিবর্তনের জন্য বা কোন সংগ্রামের জন্য এত আত্মহতি দিতে হয়নি।এবার এতবেশী আত্মহতি দিতে হয়েছে, বাংলাদেশে এমন একটি সরকার গত ১৫ বছর ধরে চরম কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাশাসন প্রতিষ্ঠা করে ছিলো সেই স্বৈরাচারকে উৎখাত করার জন্য ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থান মধ্যে দিয়ে নতুন একটি বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে রাষ্ট্র সংস্কার অত্যান্ত জরুরী, আমরা বৈষম্যবিরোধী নাগরিক সমাজ, স্বাধীন বাংলাদেশে রাষ্ট্র সংস্কারে রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় কাজ করছেন।
গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-শ্রসিক-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগের পর দেশ ত্যাগ করা শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় সুপ্রিম কোর্টের এটর্নি জেনারেল থেকে শুরু করে দেশের সব জেলা-মহানগরের আদালতসমূহে নিয়োগকৃত সকল পাবলিক প্রসিকিউটরদের (পিপি) নিয়োগ বাতিলপূর্বক নতুন করে দক্ষ ও নিরপেক্ষ আইজীবিদের নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতেও জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি)সহ সরকারি কৌসুলী, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাবলিক প্রসিকিউটর ও সহকারী প্রসিকিউটর নিয়োগ দিয়েছে অন্তবর্তীকালীন বাংলাদেশ সরকার আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় আইন ও বিচার বিভাগ, সলিসিটর অনুবিভাগ (জিপি-পিপি শাখা) স্মারক নং- সলিসিটর/জিপি-পিপি (রাঙ্গামাটি)-২৬/২০২৪ (অংশ-১)-১৬৭ তারিখঃ ৩/১১/২০২৪ খ্রি. নির্দেশিত হয়ে জানান যে, The Code of Criminal Procedure, 1898 এর Section 492 এবং The Legal Remembrancer’s Manual, 1960 এবং Chapter II, Paragraph 1 Rule 90 Paragraph 6 এবং Rule 17 এবং এর বিধান মতে রাঙামাটি জেলার জেলা ও দায়রা জজ আদালত ও এর অধীন আদালতে এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পূর্বে নিয়োগকৃত সকল আইন কর্মকর্তার নিয়োগাদেশ বাতিলক্রমে তাঁদেরকে স্ব স্ব পদের দায়িত্ব হতে অব্যাহতি প্রদানপূর্বক বর্ণিত আইজীবীগণকে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাঁদের নামের পাশে উল্লেখিতকৃত পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।দেশের অন্যান্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও নিরপেক্ষতার মাপকাঠিকে প্রধান্য দেয়া হলেও পাহাড়ি এ জেলায় খুনি শেখ হাসিনার বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এবং জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা প্রকাশ সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি-পিসিজেএসএস এর দোসর ও একজন সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত সাবেক পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ-পিসিপি নেতা রাঙামাটিতে সমালোচিত আইনজীবি এ্যাডভোকেট প্রতিম রায় পাম্পুকে পিপি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ নিয়োগকে ষড়যন্ত্র বলে জেলার স্থানীয়রা ধরে নিয়েছি, স্বৈরাচারি সরকারের দোসরদের সরিয়ে দিয়ে কট্টর একজন বাঙ্গালি বিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক ব্যক্তিকে পিপি নিয়োগ দেয়ার কারনে এ জেলার আইন অঙ্গনে নেমে আসবে কালো ছায়া। শুরু হতে হতে পারে পাহাড়ি-বাঙ্গালী বৈষম্য এবং উগ্র সাম্প্রপ্রদায়িক বিশৃঙ্খলা।রাঙামাটির আইন অঙ্গনে দূর্নীতিবাজ হিসেবে পরিচিত প্রতিম রায় পাম্পু অনেকটা আতঙ্ক রাঙামাটি আইনজীবি সমিতিতে। যখনই রাঙামাটিতে কোন দুর্নীতিবাজ বিচারক পোষ্টিং এসেছেন, তার সাথে প্রতিম রায় পাম্পুর সখ্যতা গড়ে উঠে। বিচারকদের সাথে আওয়ামীলীগ-পিসিজেএসএস এর নেতাকর্মীসহ যত রাঙামাটি জেলার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে কর্মচারী নিয়োগ এবং মামলায় অবৈধ আর্থিক লেনদেন হয়, তা প্রতিম রায় পাম্পুর মাধ্যমেই হয়।
সরকারের গুরুত্বপূর্ন গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে উঠে এসেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে পরিচিত এডভোকেটর প্রতিম রায় পাম্পু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র থাকায় বর্তমান অন্তবর্তীকালিন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টার ছাত্র হওয়ায় তার প্রতি উপদেষ্টার বিশেষ সহানুভূতি ও সমর্থন রয়েছে।এছাড়া পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনীতির আরেক নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত আত্মস্বীকৃত রাজাকার ত্রিদিব রায়ের পুত্র ও বর্তমান চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়ের সাথে মিলে, নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযানে বিভিন্ন সময়ে অস্ত্রসহ আটক সন্ত্রাসীদের মুক্তি, পাহাড়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন ইস্যুতে চলা মামলা ও পাহাড়ি বাঙ্গালী এবং নিরাপত্তা বাহিনী সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে পিসিজেএসএস এবং আওয়ামীলীগের এর হয়ে আইনগত দিকগুলো পরিচালনা করেন এডভোকেট প্রতিম রায় পাম্পু।
এসব ছাড়াও জেলার বিভিন্ন দপ্তরসহ রাজনৈতিক নেতাদের দূর্নীতি ও অনিয়মের মামলাগুলো পরিচালনায় তার নাম থাকে সবার উপরে। আদালতে দুর্নীতি ও অবৈধ অর্থ লেনদেন এর মাধ্যমে মামলা প্রভাবিত করার ব্যাপারে তার সবচেয়ে বেশী দূর্নাম রয়েছে।সম্প্রতি দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় কর্তৃক বিতর্কিত সিএইচটি রেগুলেশন বাতিল করার পর চাকমা সার্কেল চীফ দেবাশীষ রায়ের আপন চাচা প্রতিম রায় পাম্পু এই বিষয়ে সবচেয়ে বেশী ভূমিকা রেখেছেন। ভাতিজা দেবাশীষ রায়ের সাথে মিলে পাহাড়ে নিরীহ উপজাতিদের উস্কে দিয়ে সিএইচটি রেগুলেশন বহালের দাবিতে মাঠে নামানোর কারিগরও এই পাম্পু। বিতর্কিত সিএইচটি রেগুলেশন-১৯০০ বাতিল করার পর চাকমা সার্কেল চীফ দেবাশীষ রায় এবং তিনি এটি পুনর্বহালের জন্য সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছেন। তিনি দেবাশীষ রায়ের সাথে মিলে পাহাড়ের উপজাতিদের উস্কে দিয়ে সিএইচটি রেগুলেশন বহালের দাবিতে আন্দোলন করানোর নেপথ্য পরিকল্পনাকারী।রাঙামাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হিসাবে স্বৈরাচারের দোসর প্রতিম রায় পাম্পুকে নিয়োগ দিয়ে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যূত্থানের শহীদ-দের প্রতি অ-সম্মান করা হচ্ছে বলে বৈষম্যবিরোধী নাগরিক সমাজ মনে করেন। আন্তরবর্তীকালিন সরকার নতুন করে পাহাড়ে বৈষম্য সৃষ্টি করছেন।বৈষম্যবিরোধী নাগরিক সমাজ যাঁদের নিয়োগ বাতিল চায় তারা হচ্ছেন, প্রতিম রায় পাম্পু (পাবলিক প্রসিকিউটর), মাকসুদা হক (পাবলিক প্রসিকিউটর), গফুর বাদশা (অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর) ও মো. রাইসুল কবির (সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর) তাঁরা সকলেই রাঙামাটি বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য ও প্রযুক্তি লীগের সাথে যুক্ত। সকলেই বিগত ১৫ বছর ধরে খুনি শেখ হাসিনার দোসর হিসাবে চিহ্নিত এই সকল আইন আইনজীবীরা পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের সুবিধা ভোগী ছিলেন।
বির্তকিত ব্যক্তিদের রাঙামাটি জেলার জেলা ও দায়রা জজ আদালত ও এর অধীন আদালতে এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হযেছে, তাদের নিয়োগ বাতিল করার জন্য স্মারকলিপি প্রদান বলে বৈষম্যবিরোধী নাগরিক সমাজ এর পক্ষ থেকে আন্তবর্তীকালিন সরকারের আইন উপদেষ্টার কাছে জোরালো দাবি।বৈষম্যবিরোধী নাগরিক সমাজ এর দাবি নিয়োগ প্রাপ্তরা রাঙামাটি বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য ও প্রযুক্তি লীগের সাথে যুক্ত থাকায় এছাড়া বিগত ১৫ বছর ধরে খুনি শেখ হাসিনার দোসর হিসাবে চিহ্নিত এই সকল আইন আইনজীবীরা পতিত আওয়ামীলীগের সুবিধা ভোগী ছিলেন।স্মারকলিপি প্রদানকালিন উপস্থিত ছিলেন, বৈষম্যবিরোধী নাগরিক সমাজ এর সমন্বয়ক মো. আনোয়ার আজিম, সহ সমন্বয়ক জুঁই চাকমা, সদস্য মেকি চাকমা, চম্পা চাকমা, উজ্জলা চাকমা, মো. মতিউর রহমান রাজু, রুবেল,সাইফুল ইসলাম ও বাছেক মিয়া প্রমূখ।বৈষম্যবিরোধী নাগরিক সমাজ পাহাড় থেকে সকল ধরনের বৈষম্যর অবসান চায়।
প্রকাশিত:
নভেম্বর ৭, ২০২৪ ৩:১৪ পিএম
পাঠকের মতামত